June 11, 2023, 1:00 am
কারিমুল হাসান, ধুনট (বগুড়া): বাঁশ চীনা সভ্যতায় শুভ শক্তির প্রতিক হিসেবে বাড়ির আশেপাশে বাঁশগাছ লাগানো তাদের ঐতিহ্য হলেও বাঙ্গালীর জীবনে বাঁশের রয়েছে নানা মূখী ব্যবহার। ঘরের সোভা বাড়াতে বাঁশের তৈরী কুঠির শিল্পের ব্যবহার বহুদিনের। বাঁশের তৈরি বিভিন্ন তৈজস সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঘরের স্থায়িত্ব মজবুত করতে বাঁশ ব্যবহার করে। দেশে বিভিন্ন জাতের বাঁশ রয়েছে। কাজের ধরন হিসেবে বাঁশের ব্যবহারও আলাদা আলাদা। ব্যবহারে আলাদা হলেও সব জাতের বাঁশের পাতা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাঁশ ঝাড় থাকার কারনে অনেক সময় বসত বাড়ি রক্ষা পায়। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ কচি বাঁশের উপরের অংশ সবজি হিসেবে রান্না করে। মুখরোচক হওয়ায় চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বাঁশের সবজি খুব জনপ্রিয়। প্রাচীন কাল থেকে চাাহিদা থাকায় দেশের চাঁদপুর, সিলেট ও কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলাতে বাঁশের বাণিজ্যিক আবাদ হয়ে থাকে।। দেশে শুধু নির্মাণ কাজেই শত শত টন বাঁশ প্রয়োজন হয়। এছাড়াও শিল্প খাতে তৈজসপত্র তৈরীতে বাঁশের ব্যবহার তো আছেই। এক অনুসন্ধানে জানা যায় পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ জাতের বাঁশ রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে হলোমুলী, মিতিয়া, ছড়ি, আইক্কা, বাইজা, বররা, মাকাল, তল্লাবাঁশ সহ ৩৩ জাতের বাঁশের ব্যবহার রয়েছে। আধুনিক সভ্যতায় এসেও গ্রামাঞ্চলের হাট বাজার গুলোতে এখনও বাঁশের তৈরী সাংসারিক প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র পাওয়া যায়। ধানসহ বিভিন্ন ফসল রাখার পাত্র, ঝাড়ু, ময়লা ফেলার পাত্র এমন কি মাছ শিকারের উপকরণ হিসেবেও বাঁশের ব্যবহার অনেক এগিয়ে। চাহিদার কারনে দাম বাড়লেও মূলত একটি বাঁশের দামের উপর নির্ভর করে তৈজসপত্রের দাম। বগুড়ার ধুনটে এলাকা ভিত্তিক অনেক পরিবারই বাঁশ শিল্পের উপর নির্ভরশিল। তারা বিভিন্ন বাজার বা গৃহস্থ বাড়িতে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে বাঁশ সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রহিত বাঁশ পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে কাজের উপযোগি করে তোলে। পরে ভেজা বাঁশ দিয়ে তৈরী করে নানা উপকরন। উপজেলার স্থানীয় বাজার গুলোতে বিক্রি হয়ে বিক্রি করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি হয়। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবহার করলে বাঁশ শিল্প গ্রামীন অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রাখতে পারে এবং বানিজ্যিক ভাবেও এ শিল্পে বেকার সমস্যা সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন কারিগররা।
প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় বাঁশঝাড়ে বনকাক, বুলবুলি, শালিক, ফিঙ্গে সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির নিরাপদ আশ্রয়। এছাড়াও কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, গিরগিটি, মাকড়াসা, পিঁপড়া, কিছু সাপ বাঁশঝাড়ে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ভূমিধস রোধে বাঁশের প্রকৃতিগত সহযোগিতা রয়েছে। শুধু তাই নয় সঙ্গীতজ্ঞদের কাছে বাঁশের বাঁশি যুগ যুগ ধরে তুলনাহীন সুর মনে করে। ১৯৯৯ সালে জেনেভায় বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে বাঁশের বাঁশি ছিল স্বগৌরবের। প্রখ্যাত বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী ওই সম্মেলনে ভারতীয় উপমাহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন।