March 22, 2023, 12:14 pm

শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে ৩১৫জন শিক্ষার্থী

কারো মাথায় টোপা, কারো গামছা বাঁধা, কারো আবার কাস্তে হাতে। উপলক্ষ্য বিদ্যালয় মাঠ পেরিয়ে সোনালি ধানকর্তন। বোরো ধানের ভরা মওসুমে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এমন ব্যতিক্রমী ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৫ মে) দুপুরে তিনদিনব্যাপী ধানকাটা উৎসব শেষ হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ৮টা থেকে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুধু ধানকাটাই নয়, বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন সোনালি ফসল। ধানকাটা উৎসবের তিনদিনে সবমিলে প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান ক্ষেত থেকে বাড়িতে পৌঁছে নিয়েছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে দারুণ খুশি এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল জানান, বর্তমানে ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনবেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমরা মহাখুশি। অনেক উপকার হচ্ছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌমিত্র গোস্বামী বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩১৫জন ছাত্রছাত্রী মাঠে নেমে ধান কেটে দিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও সবাই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে দিবেন। সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

শিক্ষক তাপস পাঠক ও স্বপন কুমার সেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে পানি জমে গেছে। ধানে অঙ্কুরোদগম হয়ে যাচ্ছে। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দুরে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও আমরা সবসময় সৃজনশীল কাজে থাকতে চাই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মওসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘অশনি’ ঝড়ের প্রভাবে গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি জমে অনেক ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এলাকার গরিব কৃষকদের ধান কেটে দিবো। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ তিনদিন ধানকাটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রোববার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিনদিন ধানকাটা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। এই তিন দিনে অন্তত ২০জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ রেখে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কেটে দিচ্ছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো ও মানবিক কাজের সঙ্গে থাকতে চান। এই ধারাবাহিকতায় আমরা ধান কাটছি। ভবিষ্যতেও ভালো কাজ করতে চাই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, খাদ্যশষ্যে উদ্বৃত্ত নড়াইল জেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। সময় মতো বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিক মতো পাওয়ায় ধান চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় নয় হাজার কৃষককে হাইব্রিড এবং ছয় হাজার কৃষককে উফশী জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। মানভেদে বর্তমানে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।

ফরহাদ খান, নড়াইল

নিউজটি শেয়ার করুন


© All rights reserved © seradesh.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD