June 11, 2023, 1:51 am

ইল বাবা ইল,দমে দমে গিল নাচ-গান আর গাঁজা সেবনের মধ্যে দিয়েই চলছে গঞ্জিকাসেবীদের মিলন মেলা

বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যেদিয়ে পালিত হল মহাস্থানে গঞ্জিকাসেবীদের মহা মিলন মেলা। ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ সুলতান বলখী (রঃ) এর বিজয় দিবস বা বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার। যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যেদিয়ে পালন হওয়ার কথা থাকলেও, পুলিশ প্রশাসনের কোন বাধাই তারা মানেনি।

 

ইল বাবা ইল, দমে দমে গিল। নাচ গান আর গাঁজা সেবনের মধ্যে দিয়েই কেটে গেল বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার। প্রতি বছরের ন্যয়, পুন্ড্র বর্ধনের রাজধানী প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহন হিন্দু-মুসলিমদের তীর্থ স্থান, বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ্ সুলতান বল্খী মাহীসওয়ার (রঃ ) এর মাজার এলাকায়, বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এ মেলা বসে।

 

মহামারী করোনার কারনে গত দুই বছর এই মেলা হয়নি। ঐহিতাসিক মহাস্থান গড়ে লাখো নারী পুরুষের উপস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার পালিত হলো গাঁজা সেবীদের মিলন মেলা। দিন শেষে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মহাস্থান গড়ে অবস্থিত হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহমুদ মাহীসওয়ার (রঃ) এর মাযার ও এর আশপাশের এলাকায় শরিয়ত, মারিফত, তরিকত, হাকিকত, মুরশীদি, ভাওইয়া, ভাটিয়ালীসহ বিভিন্ন ধরনের গান নেচে গেয়ে রাত কাটিয়েছে ভক্তরা।

 

এ উপলক্ষে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার জটাধারীদের আগমন ঘটে এখানে। জটাধারী নারী পুরুষ গানের ফাঁকে ফাঁকে মনের সুখে গাঁজার কলকিতে টান দেয় আর বিভিন্ন ধরনের সিকলি বলে। গাঁজার ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মহাস্থান গড় এলাকার আকাশ বাতাস। এসব দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকার লাখো জনতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এখানে। মহাস্থান এলাকায় গাঁজার ধুঁয়া বন্ধ করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। বগুড়া পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এবার শেষ বৈশাখিতে মহাস্থান গড় এলাকায় গাঁজা সেবন তথা সম্পূর্ন মাদকমুক্ত পরিবেশ এবং সার্বিক আইনশৃংখলা বজায় রাখতে সার্বক্ষনিক ম্যাজিস্ট্রেট, বিপুল পরিমান পোষাক ও সাদা পোষাকে পুলিশ, র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাজার এলাকা সম্পূর্ন গাঁজা মুক্ত পরিবেশে এবারের শেষ বৈশাখ পালিত হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অত্যন্ত সতর্ককতার সাথে মহাস্থানে আগত হাজার হাজার মানুষদের তল্লাশী করা হয়েছে। মহাস্থান গড় এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারা দিন ও রাতের কিছু অংশ গোটা এলাকা ছিল উৎসবমুখর।

 

আমাদের প্রতিনিধি এস আই শফিক জানান, প্রতিবছরের মতো এবারো লক্ষাধিক জিয়ারতকারীর পাশাপাশি জটাধারী পাগলা-পাগলী গঞ্জিকাসেবিদের আগমন ঘটে এই পুর্ণ্যভূমিতে। হাজার হাজার নারী পুরুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মহাস্থান মাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিল ভক্তরা। মাজার-মসজিদ এলাকায় জিকির মিলাদ মাহফিল ও নফল নামাজ নিয়ে মুসুল্লিগণ ব্যস্ত থাকছেন। বৈশাখী উৎসব উপলক্ষ্যে মহাস্থানগড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সহস্রাধিক স্থায়ী ও ভ্রাম্যমান দোকানী তাদের পসরা খুলে বসেছে। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্যবাহী কটকটি ভান্ডার গুলিতে বিক্রি হয়েছে বেশ। আশেপাশের গ্রামগুলোতে জামাইদের আগমন ছিল লক্ষ্যণীয়।

 

এ উপলক্ষে মাযারের বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লক্ষাধিক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। রাত যত বেশি হয় মানুষের স্রোত আরো বাড়তে থাকে। তবে বিকেল থেকেই মহাস্থান গড় এলাকা ও এর আশপাশে প্রকাশ্য গাঁজার আসর বসে। গত কয়েক বছর আগে থেকে মহাস্থান মাজার মসজিদ কর্তৃপক্ষ গাঁজা সেবনকারীদের মিলন মেলার পরিবর্তে এদিনকে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর বিজয় দিবস ঘোষনা করেছে।

 

এদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মুসুল্লিদের রাতভর জিকির আজগার, মাজার জিয়ারত ও নফল ইবাদত করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর বিজয় দিবস উপলক্ষে মাযার মসজিদের খতিব ও ঈমাম মসজিদে আগত হাজার হাজার মুসুল্লিদের ইসলাম ধর্মের দীক্ষা দিয়ে থাকেন। সুপ্রাচীন ঐশ্বর্যেও লীলাভূমি, আর মহাকাল-চক্রে বিলীন অতীত পুন্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসস্তুপের উপর সসীম শুন্য নীলাকাশের নীচে মায়াবী বাংলার বুকে ছায়া-ঘেরা, পাখী ডাকা সবুজ শ্যামলী মায়ার নিকুঞ্জে মহাকালের ঐতিহাসিক মহাস্থানের কেন্দ্রভূমিতে চিরনিদ্রায় শায়ীত বিশ্ববরেন্য ওলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ সুলতান মাহমুদ বল্খী মাহী সওয়ার (রহঃ) এর পবিত্র মাজার এলাকার পবিত্রতা ও আইন শৃংখলা রক্ষার জোর দাবী জানিয়েছে আগত ধর্মপ্রান মুসলমানরা। আজ জুম;আর নামাজ শেষে আগত লোকজন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন।

মুক্তার শেখ
বগুড়া প্রতিনিধি

নিউজটি শেয়ার করুন


© All rights reserved © seradesh.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD