সম্প্রতি এই দুই নেতা বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থানের কারনে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের রোষানলে পড়ে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টিকে ‘ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করা, প্রশ্নবিদ্ধ করা, ছোট করার চেষ্টা’ বলে মনে করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা সোহান খানের আপন চাচা মোহাম্মদ ফজলুল হক খান ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌর এলাকার কুখ্যাত রাজাকার। পারিবারিক রাজনীতি আওয়ামী বিরোধী। ইয়াজ আল রিয়াদের আপন বড় ভাই মোঃ মুরাদ হোসেন মুন্না মাদক, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, প্রতারণা মামলায় ৬০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী। বাবা আবুল বাশার চাপরাশী এলাকায় নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
এদিকে সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের সাথে একাধিক নারীর ঘনিষ্ঠতার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। সেই সাথে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ভাইয়ের মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগও আছে কেন্দ্রীয় এ নেতার বিরুদ্ধে। রিয়াদ ছাত্রলীগের প্রভাব খাঁটিয়ে ভাইয়ের অপরাধের সহযোগীতা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবগত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
অপর নেতা সোহন খান সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নারী কর্মীদের পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দেয়ার দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি নারী কর্মীদের পর্ন ভিডিও পাঠানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ নেতা হয়েও রাজধানীর সেগুনবাগীচা বিলাস বহুল ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। সোহাগ-জাকির কমিটির সময় থেকে এ নেতা সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সোহান খান মাতাল অবস্থায় একাধিকবার ডিউটি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের মনোনীত প্যানেলের বাহিরে বিদ্রোহী প্যানেল দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এই দুই নেতার নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অভিযোগ দিতে যান কয়েকজন নেতা। এসময় তাদের এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে “ভিত্তিহীন” বলে তা গ্রহণ করেননি তিনি। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাসিমের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তোপের মুখে পড়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান, সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদসহ কয়েকজন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, এটা একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। এর সাথে জামায়াত-শিবির থেকে শুরু করে বিএনপি এবং এই লাইনের যারা আছে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। ছাত্রলীগ নামধারী লোক দিয়ে এগুলো করানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিতর্কিত করে বিএনপি-জামাতিরা আমাদেরকে উৎখাত করতে চায়, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে চায়। ছাত্রলীগ হচ্ছে আমাদের ফ্রন্ট ইয়ার্ড অর্গানাইজেশন। যারা সবসময়ই মানুষের কাছে, ছাত্র সমাজের কাছে, বিবেকবানদের কাছে যেয়ে কথা বলে জনমত তৈরি করে। সবকিছুই তো ছাত্রলীগ করে। ছাত্রলীগকে জনগণের জায়গা থেকে হেয় করার উদ্দেশ্যেই এগুলো করা হচ্ছে।