March 24, 2023, 9:40 am
নওগাঁ প্রতিনিধি: পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর বারোমাসি সজিনা। ফলে এই সজিনার চাষ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে নওগাঁর সাপাহারে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সজিনার চাষ করছেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী। বর্তমানে তার এ বাগানটিতে গাছ গুলোর বয়স সাড়ে ৩মাস। গাছ গুলোতে ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে মুকুল।
আকবর আলী জানান, নতুন কিছু করার জন্য ইউটিউবে সার্চ করেন বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য। এরই মধ্যে চোখে পডে বারোমাসি সজিনা চাষের ভিডিও। মূলত সেখান থেকেই আগ্রহ বাড়ে সজিনা চাষের। উপজেলার ফুরকুটিডাংগা এলাকার বেশ কিছু পতিত জমিতে শুরু করেন সজিনা চাষ। সাড়ে ৩ মাসের সজিনা গাছ দেখে তিনি বেশ খুশি।
তিনি আরও বলেন, ভারতের তামিলনাডু থেকে ওডিসি-৩ জাতের বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন সজিনার চাষ। বর্তমানে তার জমিতে প্রায় ২শ গাছ রয়েছে। সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করে সামান্য পরিচর্যায় বীজ বপনের সাড়ে ৩ মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাগানের গাছ গুলোতে অল্প পরিমানে ঝুলছে সজিনা ডাটা ও ফুল। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে সজিনা পুরোদমে আসতে শুরু করবে। বাজারে সজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জানা যায়, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনা গাছকে অলৌকিক গাছ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যক এমাইনো এসিডসহ অধিক পরিমানে আমিষ থাকে যা বহু উদ্ভিদে নাই। সজিনার বীজের তেলে যে এসিড থাকে তা বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সজিনার পাতায় দুধের চেয়ে বেশি ক্যালশিয়াম, কলার চেয়ে বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে বেশি প্রোটিন আছে। এছাড়র এর পাতায় ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সিসহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়। বিভিন্ন রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালং শাকের চেয়ে বেশি আয়রন বিদ্যমান, যা এ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সজনে শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে।
আকবর আলী বর্তমানে ওডিসি-৩ জাতের সজিনার বীজ থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার চারা উৎপন্ন করেছেন। এগুলো তিনি নতুন চাষীদের মাঝে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করতে চান। চারা বিক্রিতে যদি ভালো সাড়া পান তাহলে আরও কয়েক হাজার চারা উৎপন্ন করতে চান বলেও জানান।
সাপাহার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো: মনিরুজ্জামানা বলেন, আকবর আলীর বারোমাসি সজিনার চাষ সম্পর্কে আমি অবগত আছি। তার বাগান এখনও পর্যন্ত ভালো আছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আমরা তাকে উৎসাহ ও সহযোগিতা দিচ্ছি। তার দেখাদেখি আশেপাশের আরও অনেকে যেন এই পুষ্টিগুনে ভরপুর সজিনার চাষে উদ্ভুদ্ধ হয়। সজিনার উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীতে যতরকম খাবার আছে সবথেকে এটা একটা ডায়নামিক খাবার হিসেবে পরিচিত। এরমধ্যে এমন সব গুনাগুন আছে যা অন্য কোন খাবারে নেই।