March 25, 2023, 8:25 am
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি। চিকিৎসা ও চিকিৎসকের মাঝে বিদ্যমান প্রয়োজনীয়তার নাম ঔষধ। বগুড়ার ধুনট উপজেলা জুড়ে মানবদেহের একমাত্র চিকিৎসা অনুসঙ্গ ঔষধ বিক্রিতে নিয়োম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র চলছে ঔষধের অবাধ বিক্রি। উপজেলা জুড়ে অসংখ্য পল্লী চিকিৎসক, ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে।
এছাড়াও উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পশু হাসপাতালের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাক্তি মালিকানাধীন বেসরকারি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র। এসকল স্থান থেকে চিকিৎসা সেবার সুবিধা থাকার পরেও মেয়াদ উত্তির্ণ ভুলভাল ঔষধ কিনতে দেখা যায় মুদির দোকান থেকে।
অবিশ্বাষ্য হলেও সত্য, উপজেলা জুড়ে শতশত মোনহারি মুদির দোকানে পাওয়া যায় বিভিন্ন রোগের নানা ধরনের ঔষধ। এসকল মনোহারি মুদি দোকানে এজিথ্রোমাইসিন, ডাইক্লোফেনাক, প্যারাসিটামল, নাপা এক্সট্রা, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, কিটোরোলাক, মেট্টোনিডাজল, এন্টিহিস্টামিন গ্রুপের এলাট্রল এরকম আরো অনেক জেনেরিক নামের বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির পাশাপাশি ক্ষতিকারক যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও সিরাপ অবাধে বিক্রি হচ্ছে উপজেলার সর্বত্র। মানুষের মাথা ব্যাথা, ঠান্ডা জ্বর ও গ্যাসের সমস্যার সাথে পাল্লা দিয়ে মুদির দোকান গুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঔষধ বিক্রির প্রবনতা।
বিশেষ করে পাড়া মহল্লার আশেপাশের দোকান গুলোতে অবৈধ ভাবে ঔষধ বিক্রির ব্যবসা বেশ রমরমা। দোকান গুলোতে ঔষধ আছে তো আছেই নকল ও মেয়াদ উত্তির্ণ ঔষধও বিক্রি হয় গ্যারান্টি সহকারে। এটাতো শুধু খাবার ঔষধ। এছাড়াও ব্যবহারের মলম রাখার পাশাপাশি সরকারি হাসপালে জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত বিনামুল্যের জন্ম বিরতীকরন পিল, কনডমও কিনতে পাওয়া যায় অনেক দোকানে। কিছু ট্যাবলেটের পাতার উল্টো পাশে স্পষ্ট করে লেখা ‘বিক্রয়ের জন্য নহে’ তবুও বিক্রি হয়। সরকারি হাসপাতালের ঔষধ মুদির দোকানে কিভাবে যায়? সরকারি ঔষধ পাওয়া যায় এমন হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রশাসনের নজরদারি আছে কি?
তবে হ্যা, প্রায় এলাকাতে কিছু লোক জেলা শহর বগুড়া হতে পাইকারি দরে স্বল্প দামে ঔষধ ক্রয় করে নিজে বিক্রয় প্রতিনিধি হয়ে মুদির দোকান গুলোতে পৌছে দেন আসল নকল ভেজাল ঔষধ। অনেক সময় দোকানি নিজেই বাহির থেকে পাইকারি ঔষধ ক্রয় করে প্রশাসনের চোখে ফাকি দিয়ে করে রমরমা ব্যবসা। এ তো শুধু ঠান্ডা জ্বরের ঔষধ। মুদির দোকানে কীটনাশক বিক্রির চিত্র আরো ভয়াবহ। ফিনিস নামের এক ধরনের তরল বিষ বড় বড় মুদির দোকানে পাওয়া যায়। এছাড়াও ইঁদুর, তেলাপোকা, ছাড়পোকা নিধনের বিষ জাতীয় ঔষধ গুলো উপজেলা জুড়ে শতকতা প্রায় ৮৫ টি দোকানে বিক্রি হয়। এ ঔষধ গুলো রাখা হয় মানুষের ব্যবহার্য নানা দ্রব্য সামগ্রীর পাশে। এভাবে যদি অব্যবস্থাপনায় অবাধে এসকল ঔষধ বিক্রি চলতে থাকে তাহলে সাধারন মানুষ দোষে আঙ্গুলটা প্রথমে প্রশাসনের দিকেই তুলবে।
কোন নিয়োম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ও বে-আইনীভাবে মুদি দোকানিদের এমন ব্যবসা চলছে বহুদিন থেকে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হলেও দোকানের গোপন স্থানে ঔষধ রাখায় তা প্রশাসনের নজরে আসেনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, দোকানে দামি ব্রান্ডের কোয়েলের মোড়কে রাখা মানবদেহের নানা রোগের ঔষধ, আগরবাতীর প্যাকেটের ভিতর মহিলাদের ব্যবহারের অন টেষ্ট ষ্টিক, সাবানের খালি কার্টুনে জন্ম বিরতিকরণ পিল ও কনডম, সাঁড়ি করা সরিষার তেলের বোতলের পিছনের সাঁরিতে রাখা হয় যৌন উত্তেজক সিরাপ এভাবে নানা কৌশলে মজুদ করে ব্যবসা করে আসছে উপজেলা জুড়ে শতশত মুদি দোকানিরা।
গত ১১ সেপ্টেম্বার ২০২২ রবিবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্তের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুদির দোকানে মানবদেহের নানা ধরনের ঔষধ বিক্রি করা অবশ্যই বে-আইনী। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন কিনা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে সংবাদ কর্মীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অপর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে ১৩ সেপ্টেম্বার ২০২২ মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে না পাওয়ায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কারিমুল হাসান লিখন, ধুনট