March 25, 2023, 8:46 am

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

সৌরভ মাহমুদ (বুড়িচং) প্রতিনিধি: কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চকলক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মালু মিয়া’র ছেলে আব্দুল কাদেরকে দোষী সাব্যস্তক্রমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ডাদেশ প্রদান করেন কুমিল্লার আদালত। ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার দূপুর ১২টায় এ রায় দেন কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ০১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়- ঘটনার ৪ মাস আগে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চকলক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মালু মিয়া’র ছেলে আব্দুল কাদের এর সাথে ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা থাকলেও ২০ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করে বাকী ৩০ হাজার টাকার জন্য সময় নেওয়া হয়েছিল।
উক্ত টাকার জন্য ভিকটিমকে প্রায়ই শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করত। যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আসামীরা ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারকে প্রাণে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং ২০০৯ সালের ২৪ জুন দিবাগত রাতে আসামী আব্দুল ছাত্তার এর প্ররোচনায় আব্দুল কাদের বাদীনি খালেদা আক্তার এর বোন ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারকে মারধরের একপর্যায়ে ভিকটিম ঝর্ণা আক্তার মারা গেলে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারের লাশ চান মিয়ার পুকুরে ফেলে দিয়েছে।
পরদিন ভোর ৬টায় ভিকটিমের লাশ পুকুরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে যৌতুকের জন্য ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারকে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের বড়বোন কোতয়ালী মডেল থানাধীন মনোহরপুর গ্রামের আবু তালেব এর স্ত্রী খালেদা বেগম ২০০৯ সালের ২৫ জুন চৌদ্দগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১(ক)/৩০ ধারার বিধানমতে আসামী আব্দুল কাদের, আব্দুল ছত্তর, মনোয়ারা বেগম, সিরাজ মিয়া, জাকির হোসেন, নাজমা আক্তার ও চাঁন মিয়াকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই খাদেমুল বাহার তদন্ত শেষে একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর আসামী আব্দুল কাদের, আব্দুল ছাত্তার ও মনোয়ারা বেগম এবং নাজমা আক্তার এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে এবং আসামী সিরাজ মিয়া, জাকির হোসেন ও চাঁন মিয়াকে অব্যহতি দানের আবেদন করেন। পরবর্তীতে এজাহারকারী ওই চার্জশিট এর বিরুদ্ধে না-রাজী দাখিল করিলে ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি কুমিল্লাকে নির্দেশ প্রদান করিলে এ.কে.এম আলী আজমকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োজিত করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর আসামী আব্দুল কাদের, মনোয়ারা বেগম, নাজমা আক্তার এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১(ক)/৩০ ধারার বিধানমতে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করিলে ২০১৬ সালের ৯ জুন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ১২জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানী অন্তে আসামী আব্দুল কাদের তাঁর স্ত্রী ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারকে যৌতুকের দাবীতে হত্যা করার অভিযোগে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চকলক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মালু মিয়া’র ছেলে আব্দুল কাদেরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১(ক) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ডসহ ১০ হাজার অর্থদণ্ড এবং আসামী মনোয়ারা বেগম ও নাজমা আক্তারকে খালাস প্রদান করে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে দ্যা কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ৩৭৪ ধারার বিধান মতে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দন্ডিত আসামী আব্দুল কাদের এর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে গলায় ফাঁসির রজ্জু দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন-  ভিকটিম ঝর্ণা আক্তারের হত্যাকারী আব্দুল কাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।

নিউজটি শেয়ার করুন


© All rights reserved © seradesh.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD