March 25, 2023, 7:01 am
শ্রীমঙ্গলে একটি সড়কের কালভার্ট ভেঙ্গে দীর্ঘ ২১ দিন ধরে শহরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ৬টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। কালভার্টটি ভেঙ্গে পড়লে সেখানে বিকল্প কিছু না করার কারনে চারটি চা বাগান, দুইটি খাসিয়া পুঞ্জি ও ১টি গারো পল্লীর মানুষজন শহরের সাথে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শহরে আসার বিকল্প রাস্তা থাকলেও তা অনেক ঘুরে আসতে হয়, তাতে নিম্ন-আয়ের এসব মানুষের যাতায়াত খরচ অনেক বেড়ে যায়। এছাড়াও ওইসব এলাকার কৃষকদের বাগান থেকে লেবু, নাগা মরিচ,আনারস,খাসিয়াদের পান ও চা বাগানের প্রক্রিয়াজাত চা পাতা শহরে পৌছাতে না পেরে অনেক ক্ষতির মুখে পরছেন বাগান মালিকরা। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা শহরের স্কুল কলেজে আসতে বাড়তি ভাড়া বহন করতে হয়, পড়তে হয় নানান ভোগান্তিতে।
২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কালিঘাট চা বাগানের কালিঘাট-ধলই সড়কের কালিঘাট চা বাগানের ১৬ নম্বর সেকশন এলাকায় গত ১৩ আগস্ট সকালে মাটি ধসে দীর্ঘদিন থেকে নড়বড়ে থাকা কালভার্টটি ভেঙ্গে পরে। দীর্ঘ ২১ দিন থেকে কালভার্টটি এখনো ভেঙ্গে খালে পরে আছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা বন্ধ হওয়ায় দুই দিক থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহন ভাঙ্গা কালভার্টের সামনে এসে থামছে। লোকজন যানবাহন থেকে কালভার্টের নিচে খাল দিয়ে পিচ্ছল পথ ধরে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাচ্ছেন। বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকরা দুই থেকে তিনজন মিলে অনেক কষ্ট করে খালের নিচ দিয়ে তাদের সাইকেল এপার ওপার করছেন।
নন্দরানী চা বাগানের শ্রমিক ও সিএনজি চালক শাকিল মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে আমাদের এলাকায় আসার রাস্তাটি দীর্ঘদিন থেকে খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে। এর মাঝে কালভার্টটি ভেঙ্গে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় বেশ বিপদে আছে এই এলাকার ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ। তিনি বলেন, কালভার্টি ভাঙ্গা থাকার কারণে সঠিক সময়ে হাসপাতলে নিয়ে যেতে না পারায় এরই মাঝে সিএনজির মধ্যে দু’জন নারী চা শ্রমিক বাচ্চা প্রসব করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। এই অবস্থায় তারা মারা যেতে পারতো বলেও জানান তিনি।
লেবু ও আনারস বাগান মালিক ছায়েদ মিয়া বলেন, আমাদের বাগান থেকে লেবু আনারস, নাগামরিচ, পান নিয়ে বাজারে যেতে কনেক কষ্ট হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় জিপগাড়ি চলাচল করছে না। এই কারনে আমাদের বাগানে উৎপাদিত লেবু আনারস, নাগামরিচ কলা গাছেই নষ্ট হচ্ছে। যদি কোন যানবাহন এগুলো নিয়ে যায় তাহলে দুই থেকে তিন গুন ভাড়া বেশি দিয়ে অনেক ঘুরে যেতে হয়। এতে করে সব মিলিয়ে বাজারে বিক্রি করে খরচ উঠাতে পারিনা। আমরা বাগান মালিকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
স্থানীয় সিএনজি, অটোরিকশা ও জিপ চালকরা বলেন, কালভার্টটা ভাঙ্গার পর থেকে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। এখন অব্দি ঠিক করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা একদিকে গাড়িগুলো নিয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না। আর যেগুলো বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছি সেগুলো গ্যাস ভরতে যেতে পারছি না। এমন একটা বাজে পরিস্থিতিতে পরেছি যে বিকল্প সড়কও নেই। গাড়ি বন্ধ থাকায় রোজি বন্ধ রয়েছে। টাকার অভাবে আমরা বাজার সদাই করতে পারছিনা।
জঙ্গলবাড়ি চা বাগানের ব্যাবস্থাপক এসএনএম মাহবুব আলম মিছবাহ্ বলেন, গত ১৩ আগস্ট কালভার্টটি ভেঙ্গে পরার পর এই কালভার্টের নিচে থাকা গ্যাস লাইনে সমস্যা হয়। পরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর আমাদের চা বাগানের নিজস্ব খরচে আমরা কালভার্টের ভাঙ্গা অংশ সরানোর পর গ্যাস চালু হয়। এখন কালভার্ট ভেঙ্গে পরার কারনে রাস্তা যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষ অনেক কষ্ট করে চলাচল করছে। এছাড়া আমরা প্রক্রিয়াজাত চা পাতা শহরে উঠাতে পারছি না। এতে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না করলে চা শিল্পের পাশাপাশি লেবু আনারস বাগান মালিকরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি দু-একদিনের মধ্যে রাস্তাটি পরিদর্শন করব। তিনি বলেন আপাতত দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা কালভার্টের একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে দিব, যাতে এলাকার মানুষজন ও গাড়ি চলাচল করতে পারে।
আব্দুস শুকুর: শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)